Helpline : +88 01754 668866

যা ভালোবাসেন, সেটাই যদি আপনার কাজ হয়, তাহলে সারা জীবনই মনে হবে আপনি ছুটিতে আছেন – অক্ষয় কুমার

এখনো অক্ষয় কুমারকে বলা হয় ভারতের সবচেয়ে ‘ফিট’ নায়ক। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই। বলিউডে ‘খান’দের রাজত্বে তিনি উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। জাতীয় পুরস্কার, ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর উঠে আসার গল্প তরুণদের জন্য হতে পারে দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ক

আমার জন্ম পুরোনো দিল্লিতে, বড় হয়েছি চাঁদনী চকে। বাবা ছিলেন অমৃতসর আর মা কাশ্মীরের বাসিন্দা। ডন বসকো স্কুলে পড়ালেখা করেছি। ছোটবেলা থেকে আমার খেলাধুলার বাইরে আর তেমন কোনো শখ ছিল না। ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবল, হকি—সব খেলতাম। একটা মেয়েকে ভালোবেসে, তার নজর কাড়তে মার্শাল আর্ট শেখা শুরু করেছিলাম। পরে আবিষ্কার করলাম, মেয়েটার চেয়ে আমি মার্শাল আর্টকেই বেশি ভালোবেসে ফেলেছি! মাধ্যমিক পেরোনোর পর বাবাকে বললাম, মার্শাল আর্ট নিয়ে আমি আরও দূর যেতে চাই। বাবাও আমার ইচ্ছে পূরণ করার জন্য খুব কষ্ট করলেন। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে আমাকে ব্যাংককে পাঠালেন। সেখানে পাঁচ বছর কারাতে শিখেছি। মার্শাল আর্ট শিখেছি, থাই বক্সিং শিখেছি। আর শিখেছি রান্না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, ব্যাংককে টিকে থাকতে হলে আমাকে হয় রান্না শিখতে হবে, নয়তো ‘না খেয়ে থাকা’ শিখতে হবে। আমি রান্নাটাই বেছে নিয়েছিলাম।

এরপর কলকাতা গিয়েছি, সেখানে কিছুদিন কাজ করেছি। ঢাকা গিয়েছি, সেখানে কিছুদিন কাজ করেছি। ঢাকায় আমি একটা হোটেলে কাজ করতাম। কলকাতায় কাজ করতাম একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে। ব্যবসাও করেছি। দিল্লি থেকে গয়না কিনে বম্বেতে নিয়ে বিক্রি করতাম। কুন্দানের গয়না তো চেনেন? বম্বেতে তখন খুব জনপ্রিয় ছিল। ধরুন, দিল্লি থেকে ২০ হাজার রুপির গয়না কিনলাম, বম্বেতে সেটা ৩০ হাজার রুপিতে বিক্রি করতাম। পাশাপাশি কয়েকটা বাচ্চাকে মার্শাল আর্ট শেখাতাম। মাসে আয়-রোজগার মন্দ হতো না। তো আমার এক ছাত্রের বাবা একদিন বললেন, ‘তুমি তো বেশ লম্বা আছ, দেখতেও বেশ সুদর্শন, মডেলিং কেন করছ না?’

আমি তো ‘মডেলিং’ কী জিনিস, সেটাই জানতাম না! আমার মা-বাবা কিংবা পরিবারের কারোরই এ ব্যাপারে কোনো ধারণা ছিল না। তো সেই ভদ্রলোক বললেন, ‘চলে এসো, আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।’

গেলাম একদিন। এসি রুমে দুই-আড়াই ঘণ্টা ফটোসেশন হলো, ভালো খাবার পেলাম। দিন শেষে তিনি আমাকে ২১ হাজার রুপির একটা চেক ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তুমি যেতে পারো।’ বললাম, ‘ব্যস, কাজ শেষ!’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আমি তো অবাক! দিনে পাঁচ ঘণ্টা মেহনত করি, মাস শেষে হাতে হয়তো পাঁচ হাজার রুপি থাকে। আর এরা দুই ঘণ্টায় ২১ হাজার দিয়ে দিল! এমন কী বিশেষ কাজ করলাম! ভাবলাম, বাহ্‌, আমি তাহলে মডেলই হব। এখানে-ওখানে ছবি পাঠাতে শুরু করলাম, র‍্যাম্পে হাঁটলাম। এভাবে চলল বেশ কয়েক দিন। হঠাৎ একদিন একজন আমাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল। আমার আজও মনে আছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তিনি আমাকে ৫ হাজার ১ রুপির একটা চেক দিয়েছিলেন। তিনটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম।

ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য পোর্টফোলিও বানাতে হয়। অনেকগুলো ছবি তুলে আমি ইয়া মোটা পোর্টফোলিও বানিয়েছিলাম। তো ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম মুম্বাইয়ের জুহু সৈকতে। সেখানে খুব সুন্দর একটা বাংলো দেখে দারোয়ানকে বলেছিলাম, আমি কি ভেতরে ঢুকে কয়েকটা ছবি তুলতে পারি? দারোয়ান সাফ মানা করে দিয়েছিল। কারণ, বাংলোটা ছিল একজনের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। বাধ্য হয়ে বাংলোর দরজার কাছে দাঁড়িয়েই ফটোসেশন করেছিলাম। কয়েক দিন আগে পুরোনো ছবি ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, সেদিন যেই বাংলোতে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, এখন আমি সেই বাংলোতেই থাকি!

আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটা শিশুরই কোনো না কোনো বিশেষত্ব আছে। কেউ কম্পিউটার ভালো পারে, কেউ পড়ালেখায় ভালো, কারও বিজ্ঞান ভালো লাগে, কারও ভালো লাগে গণিত। প্রতিটা শিশুর কোনো না কোনো গুণ থাকে। মা-বাবার কাজ হলো সেই গুণটা খুঁজে বের করা এবং সেটাকে আরও বিকশিত হতে সাহায্য করা। আমার ছেলেকে নিয়ে অনেকে বলে, ও তো নিশ্চয়ই সিনেমায় নাম লেখাবে। আমি বলি, কেন? হ্যাঁ ওর যদি মন চায় তো সিনেমা করতে পারে। মন অন্য কিছুতে আগ্রহী হলে ও তা-ই করবে। ওর মনের ওপর আমি কেন জোর খাটাব? আমার ছেলে পড়ালেখায় ভালো। আবার ভালো ছবিও আঁকে। আমি ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলি, ঠিক আছে বেটা, মন দিয়ে ছবি আঁকো। আমি মনে করি, সব মা-বাবার এটা জানা জরুরি, আপনার সন্তান কী হতে চায়? কী করতে চায়?

বাবা বলতেন, ‘বেটা, অন্তত বুঝদার হওয়ার মতো পড়ালেখাটুকু কর। যেন বড় বড় মানুষের মাঝখানে তুই যখন দাঁড়াবি, তখন যেন তোকে বোকা মনে না হয়। তোকে ইংরেজি জানতে হবে, জানতে হবে পৃথিবীটা গোল। ইতিহাস জানতে হবে, ভূগোল জানতে হবে। ব্যস। বলছি না তুই বিরাট জ্ঞানী হ। এটুকুই যথেষ্ট।’

যা ভালোবাসেন, সেটাই যদি আপনার কাজ হয়, তাহলে সারা জীবনই মনে হবে আপনি ছুটিতে আছেন। আমি যেমন বাঞ্জি জাম্প খুব পছন্দ করি। একসময় আমাকে টাকা খরচ করে বাঞ্জি জাম্প করতে হতো। এখন সেই একই অ্যাকশন করার জন্য উল্টো আমি টাকা পাই! সাফল্যের জন্য আমি ক্ষুধার্ত নই, আমার ক্ষুধা ভালো কাজের জন্য। প্রতিদিন নিজেকে বলি, আমার কী সৌভাগ্য, জীবনের এ পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছি।

অক্ষয় কুমারের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার অবলম্বনে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ

সূত্রঃ প্রথম আলো

Free shipping

On all orders above Tk. 10,000

Easy 7 days returns

7 days money back guarantee

Warranty

Offered in the country of usage

100% Secure Checkout

bKash / MasterCard / Visa